আমি পারিনা আর পারিনা.....

Comments · 487 Views

.....................................................

শিকল পাগলার একটা গান আছে "... আমি কেন মরি না, আজরাইল কি চিনে না আমারে..."

শ্রীলংকার ক্ষমতাসীনদের দুর্গতিতে আমাদের এখানে কিছু মানুষ এর মনে এই গানের কথারই অবস্থা বিরাজ করছে মনে হয়। তারা ভাবছে এখানেও হয়তোবা একই রকম কিছু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ভাবছে না, অই পরিস্থিতি হলে তাদের নিজেদের এবং প্রিয়জনদের অবস্থা কিরকম হবে ? ঘর যখন ভাংগে, তখন সে ঘরে কারুরই থাকার জায়গা থাকে না। নগরের আগুন কিন্তু মসজিদ-মন্দির চেনে না। এরা তো বাবার সাথে মতান্তর হলে নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মানুষ। তাদের অবস্থা দেখে রোদ্দুর রায়ের "অই দেখ অই দেখ চাঁদ উঠেছে, চাঁদের আলোয় কিছু বোকা* দা জুটেছে" গানটা গাইতে খুব করে ইচ্ছে করছে !

বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে বিশ্বের মোড়লদের চোখে চোখ রেখে। জন্মের সময় ই যুক্তরাষ্ট্রের ততকালীন ফরেন সেক্রেটারি হেনরি কিসিঞ্জার যাকে "বটমলেস বাস্কেট" বলে উপহাস করেছিলেন। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪০ টা বড় অর্থনীতির দেশের একটি।

আর এই সুর তো কিছুদিন পরপরই শুনছি "বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান।" কিন্তু স্বপন দেখা ছাড়া বিশ্ববাস্তবতায় এটাও হবার নয়।

আমাদের অনেক অনেক সমস্যার জঞ্জাল আছে, যাকে আমাদের উত্তর প্রজন্ম সাফ করবেই, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

শ্রীলংকার আজকের যে অর্থনৈতিক দুর্গতি তার অনেক গুলো কারন আছে, কিছু নিচে তুলে ধরছিঃ

১) ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার সাথে ভোটের রাজনীতিকে মাথায় রেখে রাষ্ট্রিয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদের রেজাল্ট এটি। তামিল বিদ্রোহীদের নিঃশেষ করে তারপর ২০১৯ সালের আত্মঘাতী হামলার পর সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়কে নিষ্পেষন করে মাহিন্দ্রা উগ্র সিংহলি জাতীয়তাবাদকে চাষ করেছেন কারণ ৭০ শতাংশ ভোট বৌদ্ধদের।

২) পর্যটন নির্ভর দেশটির ২০১৯ সালের দেশব্যাপী জংগী হামলা এবং গত দু'বছর এর কভিড পরিস্থিতি তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন খাতকে একেবারে ধংস করে দেয়।

৩) অরগানিক খাদ্যশস্যকে টার্গেট করে নতুন কৃষিনীতি তাদের খাদ্য উৎপাদনকে ভয়ংকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে ফরেন কারেন্সি দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

৪) ভোটের চিন্তা মাথায় রেখে জনপ্রিয় বিপদজনক ডিসিশনে করহারের হ্রাসের খেসারত শ্রীলংকা আজ দিচ্ছে।

৫) চীন বিশ্ব রাজনীতির নতুন প্লেয়ার এটা আমরা এখন নিশ্চয়ই জানি। কিছুদিন আগে চীন প্রশান্ত মহাসাগরের সলমন আইল্যান্ডে সামরিক ঘাটি করার চুক্তি তে এসেছে, আর হাম্বানটটা বন্দর এর মালিকানার মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা মেনে নেবার কোন কারণই নেই। ইন্ডিয়ারও যা মেনে নেবার উপায় নেই। উপরিউক্ত বিষয়গুলোর ফলশ্রুতিতে মার্কিন-ইন্ডিয়ান যৌথ স্টেপে শ্রীলঙ্কাতে বিপুল দৃশ্যমান ঝামেলা সৃষ্টিই করা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্বের সুযোগে সেখানে চীন যেন স্টেপ ফেলতে না পারে।

শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এক নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের মূল খাত দুটি - আরএমজি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, তবে দীর্ঘস্থায়ী উক্রেইন যুদ্ধ যাকে ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে পারে। আমাদের এখানে কৃষিখাত অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে শক্তিশালী। আমদের এখানে সুশাসনের অভাব, ব্যাপক লুটপাট আছে এটি তিক্ত সত্য, সেটি কাটিয়ে উঠাই বাংলাদেশ এর জন্য এখন মূল চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কাকে দেখে আমাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিন্যান্স মিনিষ্ট্রি অলরেডি যথেষ্ট যৌক্তিক স্টেপ ফেলতে শুরু করেছে।

আর আইএমএফ ডাটা বলছে, বাংলাদেশের পাবলিক ঋণের পরিমান ১৩১.১৪ বিলিয়ন ডলার , যা ২০২০ সালের জিডিপির ৩৪.৭%; যা দক্ষিন এশিয়ার মাঝে সর্বনিম্ন। শ্রীলংকায় যা ছিল তাঁদের জিডিপির ১১২.২% ।

"মাইলস টু গো......"

Comments